সোমবার, ২ জানুয়ারী, ২০১২

১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্সি আদেশ মোতাবেক সর্বোচ্চ সিলিং বা জমি দখলে রাখার সীমাদ্ধতা:



১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্সি আদেশ মোতাবেক সর্বোচ্চ সিলিং বা জমি দখলে রাখার সীমাদ্ধতা:
সিলিং:  সিলিং কথাটির শাব্দিক অর্থ হলো সীমাবদ্ধতা বা সর্বোচ্চ সীমা। সিলিং শব্দটি জমি জমা সংক্রান্ত আইনেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ৯০ ধারায় জমি জমা ভোগ দখলে রাখা কিংবা গ্রহণের ব্যাপারে সীমাবদ্ধতার কখা উল্লেখ করা হয়েছে যাকে আমরা আইনী ভাষায় সিলিং বলে থাকি। ১৯৭০ সালের পূর্বে তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে আইয়ুব খাঁ সরকারের আমলে পরিবার ভিত্তিক ভুমি সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা বা সিলিং এর পরিমাণ ছিল ৩৭৫ বিঘা। তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৫//১৯৭২ সালে জারিকৃত এবং তাত্ক্ষণিক ভাবে বলবত্কৃত বাংলাদেশ ল্যান্ড হোল্ডিং (লিমিটেশন) -১৯৭২ এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্সি আদেশ নং-৯৮/১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন পরিবার বা সংস্থা সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা বা ৩৩.৩৩ একর পর্যন্ত  জমি অর্জন এবং দখলে রাখতে পারবেন। উক্ত প্রেসিডেন্টের আদেশে আরো বলা হয়েছে যে যদি কোনো পরিবার বা সংস্থা অত্র আদেশ জারির পরে ১০০ বিঘার বেশি সম্পত্তি অর্জন করতে কিংবা দখলে রাখতে পারবেনা যদি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নিকট ১০০ বিঘার বেশি জমি থাকে তাহলে সরকারের বরাবরে অতিরিক্ত জমিগুলি ছেড়ে দিতে হবে। এমন কি কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বা সংস্থা ক্রয়, উত্তরাধিকার, দান বা হেবা বা অন্য কোনা উপায়ে ১০০ বিঘার বেশি জমি অর্জন করতে পারবেনা। তবে এই সিলিং বা সীমাবদ্ধতা ওয়াকফ, দেবোত্তর বা কোনো ধর্মীয় বা দাতব্য ট্রাস্টের ক্ষেত্রে প্রযোয্য হবেনা।
তবে উল্লেখ্য যে যদি কোনো ব্যক্তির নিকট ১০০ বিঘার বেশি জমি থাকে এবং সেই ব্যক্তি যদি উক্ত জমি হতে আয়কৃত টাকার কিছু অংশ ব্যক্তিগত কাজে এবং কিছু অংশ ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যবহার করে  সেক্ষেত্রে ধর্মীয় বা দাতব্য কাজের উদ্দেশ্যের সম্পুর্ণরুপে উত্সর্গকৃত আয়ের অংশটুকুই কেবলমাত্র সিলিং বা সীমাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাবে
তবে উক্ত  প্রেসিডেন্সি আদেশ নং-৯৮/১৯৭২ এর নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে সরকার যদি যোগ্য মনে করেন তাহলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জমি জমা অর্জন ভোগ দখলের সীমাবদ্ধতা মওকুফ (Relax) করতে পারেন। ক্ষেত্রেগুলি হলো:
  • যদি কোনো কৃষক সমবায় সমিতি, তাদের সমিতির মাধ্যমে অর্জিত ভুমির স্বত্ত্ব (Title) উক্ত সমিতির নিকট সমার্পন করে এবং সংশ্লিষ্ট কৃষক সমিতিতে জড়িত কৃষকেরা  নিজেরা জমি চাষাবাদ করেন
  • যদি কোনো কৃষক চা, রাবার অথবা কফি চাষ অথবা ফলের বাগানের জন্য জমিগুলি ব্যবহার করেন
  • কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান এর ফ্যাক্টরিতে পন্য দ্রব্য প্রস্তুত করার জন্য যদি কাঁচামাল উত্পাদন করার জন্য জমির প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে সরকার সিলিং বা জমিজমার সীমাবদ্ধতা মওকুফ করতে পারেন।
  • অথবা যেক্ষেত্রে সরকার জনস্বার্থের প্রয়োজনে সিলিং মওকুফ করা আবশ্যক বলে মনে করবেন সেক্ষেত্রে জমি অর্জন ভোগ দখলের সীমাবদ্ধতা বা সিলিং মওকুফ করতে পারবেন

১৯৮৪ সালের ভুমি সংস্কার অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভুমির সর্বোচ্চ সিলিং:
১লা বৈশাখ ১৩৯১ বাংলা সাল তথা ১৪//১৯৮৪ইং তারিখের পূর্বে বাংলাদেশের কোনো পরিবার বা সংস্থা সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমি ক্রয়ের মাধ্যমে কিংবা দান, উত্তরাধিকার কিংবা  অন্য কোনো উপায়ে অর্জন করতে পারত এবং ভোগ দখলে রাখতে পারত, কিন্তু সরকার ১৯৮৪ ইং সালের ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ঘোষনা করেছেন যে, ১৪ই এপ্রিল ১ঌ৮৪ সাল তথা ১লা বৈশাখ ১৩৯১ বাংলা তারিখ থেকে কোনো মালিক পরিবার বা সংস্থা ৬০ বিঘার (২০ একর) অতিরিক্ত কোনো কৃষি জমি ক্রয় সুত্রে/ উত্তরাধিকার সুত্রে/দান বা হেবা কিংবা অন্য কোনো উপায়ে অর্জন করতে পারবেন না
অত্র অধ্যাদেশের নং ধারার উপধারাতে  বলা হয়েছে যে এই অধ্যাদেশের কোনো বিধান লংঘন করে যদি কোনো মালিক বা পরিবার বা ব্যক্তি বা কোনো সংস্থা যে কোনো পদ্ধতিতে নতুন কৃষি জমি অর্জন করেন এবং পূর্বে এবং নতুন অর্জিত জমির পরিমাণ যদি ৬০ বিঘার অতিরিক্ত হয়ে যায় তাহলে  ৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমি সরকারের হাতে ন্যস্ত হয়ে যাবে। তবে উল্লেখ্য যে ৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমি গুলি যদি উত্তরাধিকার, দান (হেবা) এর মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকে তাহলে উক্ত অতিরিক্ত জমির জন্য সরকার জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিবেন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন